অল্পস্বল্প এবসট্রাক্ট এলজাব্রা (বিমূর্ত বীজগণিত)
আমরা মোটামুটি সবাই হাইস্কুলে উঠে একটা ধাক্কা খাই গণিতের বই দেখে। আমাদের চিরচেনা সংখ্যার জায়গা দখল করে , x, y, z , (a+b)² । আসলে আমরা আমাদের চিন্তার জগত কে বড় করতে থাকি। সুনির্দিস্ট সংখ্যার বদলে সংকেত এর মাধ্যমে গাণিতিক চিন্তা করতে শেখা শুরু করি। এই সংকেত এর মাধ্যমে চিন্তা করার মধ্য দিয়ে আমার এবসট্রাক্ট (এবসট্রাক্ট এর বাংলা ব্যবহার করছিনা ) ভাবে গণিতের সমস্যা কে চিন্তা করি ।
যেমন, একটা বিষয় খেয়াল করলে আমরা দেখব আমরা সংখ্যা গুলাকে x, y, z দিয়ে রিপ্লেস করলেও গাণিতিক অপারেশন যেমন যোগ বিয়োগ গুন ভাগ এই অপারেশন গুলোকে কিন্তু অন্য কোনও সংকেত দিয়ে প্রকাশ করি না ।
আবার একটা সময় পরে আমাদের চেনা সংখ্যা গুলাকে কিছু বিশেষ শ্রেণীতে আলাদা করি। যেমনঃ ১ থেকে শুরু করে অসীম পর্যন্ত ( ১, ২ , ৩,…) পূর্ণসংখ্যা গুলো কে স্বভাবিক সংখ্যা ন্যাচারাল নাম্বার। আবার দশমিক এ প্রকাশ করা যায় এমন সংখ্যা গুলাকে বাস্তব সংখ্যা বলি । বাস্তব সংখ্যা কে যদি দুইটা পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসাবে প্রকাশ করা যায়, যেখানে হর শূন্য নয় বা যে ভগ্নাংশ সসীম বা পৌনঃপুনিক তার নাম দেই মুলদ সংখ্যা (Rational number) আর না হলে বলি অমূলদ সংখ্যা ।
আমাদের আবার এক ধাক্কা আসে যখন আমারা -১ এর বর্গমূল বের করতে যাই। তখন আবারো নতুন সংখ্যার ধারনার জন্ম হয় যাকে আমরা নাম দেই জটিল সংখ্যা।
আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি এই সংখ্যা গুলোর কোনও সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে কিনা ? কেনো বাস্তব সংখ্যার জগতে -১ এর বর্গমূল নেই ? কেনো স্বভাবিক সংখ্যার জগতে ০ (শূন্য) নেই ? আসলে এসব নিয়ে আমাদের জন্মের অনেক অনেক আগেই এই ধরনের চিন্তা করেছেন এভারিস্ত গালোয়া নামের এক ফরাসি কিশোর। তার হাত ধরেই শুরু হয় গ্রুপ থিওরি ।
গ্রুপ এর ধারনার জন্য অবশ্যই আমাদের সেট এর ধারণার সাহায্য লাগবে ।
যেকোনো উপাদান এর সেট এর যদি নিচের ৫ টা বৈশিষ্ট্য থাকে তাহলে সেই সেট কে আমরা গ্রুপ বলতে পাড়ব। খেয়াল করুন এখানে কিন্তু উপাদান বলা হইছে। যে কোনও উপাদান, সেটা সংখ্যা হতে পারে আবার বড় কোনও সমীকরণ ও হতে পারে । এই বৈশিষ্ট্য গুলা সেট এর দুইটা উপাদান এর মধ্যে একটা গাণিতিক অপারেশন, ধরি সেটা (*) ( এই স্টার সিম্বল যোগও হতে পারে আবার গুনও হতে পারে) জন্য বর্ননা করা যায় । ধরি a, b , c , e একটা সেট এর ৪ টি উপাদান । গ্রুপ G বৈশিষ্ট্য গুলো ( গ্রুপ কে সাথারণত G দিয়ে প্রকাশ করা হয় )
- ক্লোজড ঃ a*b=c , এর মানে হচ্ছে কোন গ্রুপ G এর দুইটা উপাদান যদি স্টার( ধরি যোগ ) করি তাইলে ফলাফলটিও ওই গ্রুপের উপাদান হবে।
- এসোসিয়েটিভঃ (a*b)*c = a*(b*c)। এর মানে হচ্ছে উপাদান গুলো স্টার এর ক্ষেত্রে বিতরণ করা যাবে । যেমন যোগের ক্ষেত্রে আমারা ব্রাকেট এর অবস্থান পরিবর্তন করলেও ফলাফল অপরিবর্তিত থাকবে । বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করুন ।
- আইডেন্টিটি ঃ e*a=a , গ্রুপে অবশ্যই একটি উপাদান থাকবে যা কে আর ভাঙ্গা যাবে না । বাংলায় একে অভেদ বলি । যেমন যোগের ক্ষেত্রে শূন্য । এই অভেদের সাথে যাই যোগ বিয়োগ করি না কেনও ফলাফল সেই সংখ্যাটাই হবে।
- ইনভার্স ঃ a*(-)a=e, একটা উপাদান কে সে উপাদান এর বিপরীত উপদান দিয়ে যোগ করলে অভেদ পাওয়া যাবে, সব উপাদানের বিপরীত উপাদানও সেই গ্রুপের সদস্য হবে।
- কমিউটেটিভঃ a*b=b*cঃ উপাদান গুলোকে বিনিময় করা যাবে ।
উদাহরণ ঃ যেমন সকল পূর্ন সংখ্যার সেট যোগের ক্ষেত্রে একটা গ্রুপ তৈরি করে।
যেমন ০,১,২,৩ … অসীম সংখ্যক পূর্ন সংখ্যা আছে ।
১। ২+৩ = ৫ যা পূর্ন সংখ্যা । (ক্লোজড)
২। ২+(৩+৫ )= ১০ = (২+৩)+৫ ( এসোসিয়েটিভঃ )
৩। ২ + ০ = ২ (আইডেন্টিটি)
৪ । ২ + (-২ )= ০ (ইনভার্স)
৫ । ২ + ৩ = ৩+ ২ (কমিউটেটিভ)
আপাত দৃষ্টিতে গ্রুপের ধারনার তেমন কোনও সিগ্নিফিকেন্স না থাকেলেও বর্তমানে এই ধারনার মাধ্যমে অনেক গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা গেছে । প্রতিনিয়ত আমরা গ্রুপের ধারণা ব্যবহার করতেছি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ।
আচ্ছা গুনের ক্ষেত্রে পূর্ণসংখ্যার সেট কি গ্রুপ গঠন করবে ? চিন্তা করেন । আজ এই পর্যন্তই